Friday, January 18, 2019

বিভিন্ন প্রকার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানুন [LAN, MAN, WAN]

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network)

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network), একে সংক্ষেপে বলা হয় ল্যান (LAN) বলা হয় । একই বিল্ডিং এর মাঝে অবস্থিত কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে বলা হয় লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক । এই ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন খুব সহজ, এর্ং এর জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস সমুহের দাম খুব কম । এই ধরনের নেটওযার্কে ব্যবহৃত ডিভাইস সমুহ হল হাব, সুইচ, রিপিটার ।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে থাকি। ছোট-মাঝারি অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এ ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে ডিভাইসসমূহের পরস্পরের মধ্যে তথ্য এবং রিসোর্স শেয়ার করা। তবে সাধারন ভাবে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলতে এটা বলা যায় যে কিছু কম্পিউটার তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যেখানে সংযুক্ত কম্পিউতার গুলোর ভেতর তারের মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদান সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ল্যান প্রযুক্তির কিছু হল ইথারনেট, টোকেন রিং এবং FDDI। বেশীরভাগ ল্যান নেটওয়ার্কগুলো যোগাযোগ করতে TCP/IP Protocol ব্যবহার করে । একটি ল্যান নেটওয়ার্কে সাধারণত Twisted-Pair Cable ব্যবহার করা হয় ।
মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network):
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network) । একে সংক্ষেপে বলা হয় ম্যান (MAN) বলা হয় । একই শহরের মধ্যে অবস্থিত কয়েকটি ল্যানের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারফেসকে বলা হয় মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN) । এ ধরনের নেটওয়ার্ক ৫০-৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই নেটওয়ার্কর ডাটা ট্রান্সফার স্পিড গিগাবিট পার সেকেন্ড। এ ধরনের নেটওয়ার্ক এ ব্যবহিত ডিভাইস গুলো হলো রাউটার, সুইজ, মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা ইত্যাদি।

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক থেকে এর পার্থক্য হলো এই যে, ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে গতি কম থাকে, কিন্তু মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে আমরা বেশ উচ্চগতি পেতে পারি। এটি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন অফিসকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক ৫০-৭০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক এর বৈশিষ্ট্যসমূহ :

  • মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে যুক্ত বিভিন্ন সাইট একই শহরে অথবা এর আশেপাশের শহরে বিস্তৃত থাকে।
  • মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেগাবিট পার সেকেন্ড (Mbps), এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গিগাবিট পার সেকেন্ড (Gbps) স্পীড পাওয়া যেতে পারে।
  • এর মাধ্যমে একাধিক ল্যানের মধ্যে একটি সংযোগ গড়ে ওঠে।
  • এ ধরনের নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ডিভাইস যেমন – রাউটার, টেলিফোন, এটিএম সুইচ এবং মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network):

ওয়াইড এরিয় নেটওয়ার্ক (Wide Area Network), একে সংক্ষেপে ওয়্যান (WAN) বলা হয়। দূরবর্তী ল্যানসমূকে নিয়ে গড়ে উঠা নেটওয়ার্ককে বলা হয় ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN। ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক সাধারণ ধীরগতির হয়ে থাকে।
সাধারণত দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে এই ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক এর ডাটা ট্রান্সফার স্পীড ৫৬ কেবিপিএস থেকে ১.৫৪৪ এমবিপিএস। এ ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন বেশ জটিল এবং সাধারণত বিশাল ভৌগলিক এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এ ধরনের নেটওয়ার্কে ব্যবহিত ডিভাইসগুলো হলো রাউটার, মডেম, ওয়্যান সুইচ ইত্যাদি

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক এর বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • এসব নেটওয়ার্ক বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠতে পারে, এমনকি এর বিস্তৃতি গোটা বিশ্বজুড়ে হতে পারে।
  • ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ল্যানের চেয়ে সাধারণত ধীর গতির হয়ে থাকে।
  • ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে অবশ্যই কোনো ইন্টারনেটওয়ার্কিং ডিভাইস যেমন – রাউটার, মডেম, ওয়্যান সুইচ ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।

প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network):

আইপি অ্যাড্রেসিং আর্কিটেকচারে অনুসারে ঐ সকল নেটওয়ার্ককে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলা হয় যেখানে প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস স্পেস ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়। IPv4 এবং IPv6 specifications প্রাইভেট আইপি রেঞ্জ নির্ধারণ করে । আবাসিক এবং অফিসে সাধারণত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ককে এই সকল রেঞ্জ এর আইপি অ্যড্রেস ব্যবহার করা হয়। এই নেটওয়ার্ককে চাইলেই যে কেউ অ্যক্সেস করতে পারে না ।

পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network):

পাবলিক নেটওয়ার্ক হল একটি সার্বজনিন নেটওয়ার্ক । যে কেউ এই নেটওয়ার্ক অ্যকসেস করতে পারে । এ সকল নেটওয়ার্ক IPv4 এবং IPv6 specifications এর পাবলিক আইপি অ্যড্যেস দ্বারা গঠিত করা হয়। যার ফলে ইন্টারনেটে সংযুক্ত যে কেউ এই নেটওয়ার্ক অ্যক্সেস করতে পারে। এ সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য কিছূ নিয়ম নীতি নির্ধারণ করা থাকে । তবে যেহেতু এটি একটি সর্বজনিন নেটওয়ার্ক তাই এখানে ব্যবহারকারির তথ্যের নিরাপত্তার ঝুকি থাকে ।

সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্ক (Circuit switched Network):

সার্কিট স্যুইচিং একটি টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি যা দুটি ডিভাইস এর যোগাযোগের আগে দুটি নেটওয়ার্ক এর হোস্ট সমুহের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড কমিউনিকেশন চ্যানেল (সার্কিট) স্থাপন করে। সার্কিট স্যুইচিংয়ে, প্রকৃত ডাটা ট্রান্সমিশন শুরু হওয়ার আগে পথ নির্ধারণ করে । সার্কিট-সুইচড নেটওয়ার্কের ডিফারেন্সিং উদাহরণ হল প্রাথমিক এনালগ টেলিফোন নেটওয়ার্ক।

ম্যাসেজ সুইচ নেটওয়ার্ক (Message Switched Network) :

ম্যাসেজ সুইচিং হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক সুইচ টেকনিক, ডাটাটি সম্পূর্ণরূপে সোর্স হোস্ট থেকে গন্তব্য হোস্ট এর দিকে সংরক্ষিত হয়। ডাটা রাউটিংয়ের সময় নেটওয়ার্কে প্রতিটি ইন্টারমিডিয়েট সুইচ পুরো ডাটাটিকে সংরক্ষণ করে। ডাটা পাঠানোর জন্য যদি পুরো নেটওয়ার্কটি যদি কার্যকর না হয় বা নেটওয়ার্কটি বন্ধ হয়ে যায়, ম্যাসেজ-সুইচ নেটওয়ার্ক ডাটা স্টোর করে এবং ডাটা কার্যকর করার জন্য যে কোন ধরনের মাধ্যম সুপ্রাপ্য না হওয়া পর্যন্ত এই ডাটা প্রেরণ করতে বিলম্ব করে।

প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক (Packet Switch Network):

একটি প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ক এমন এক ধরনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা ডাটাকে ছোট ছোট প্যাকেট আকারে টান্সমিট করে। প্রত্যেকটি ডাটার সাথে সোর্স এবং ডেস্টিনেশন এর অ্যড্রেস ধারণ করে থাকে। প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ককে প্রতিটি ডাটাকে ছোট ছোট প্যাকেট আকারে ভাগ করে  এবং  প্যাকেটটিতে গন্তব্যের তথ্য ধারণকারী একটি শিরোনাম দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি প্যাকেটটি এই শিরোনাম ব্যবহার করে গন্তব্যস্থলের নেটওয়ার্কে প্রেরিত হয়। গন্তব্যস্থলে প্রাপ্ত পাকেটগুলি থেকে ডেটা একত্রিত করে মুল ডাটাতে রুপান্তরিত করে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Point to Point Network):

পয়েন্টে টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক হল এমন একটি নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যাতে দুটি কম্পিউটার বা হোস্ট একে অপরের সাতে ডাইরেক্টলি কানেকটেড থাকে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক এর একটি উত্তম উদাহরণ হল দুটি ফোন এর মধ্যে কথোপকথোন । এখানে দুটি মোবাইল পয়েন্ট টু পয়েন্ট কানেকশনে থাকে।

ব্রডকাষ্ট বা মাল্টিপয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Broadcast or Multipoint Network):

ব্রডকাস্ট বা মাল্টিকাস্ট নেটওয়ার্ক হল এমন একটি সিস্টেম যাতে একটি কম্পিউটার বা হোস্ট একসাথে অনেকগুলি কম্পিউটার বা হোস্ট এর সাথে কানেকটেড থাকে। কোন কম্পিউটার ডাটা শেয়ার করলে তা নেটওয়ার্কেক এর অনেক গুলি কম্পিউটার তা গ্রহন করতে পারে। আশাকরি, আপনাদের নেটওয়ার্ক এর প্রকারভেদ সর্ম্পকে অনেক ভাল ধারণা পেয়েছেন।

No comments:

Post a Comment